অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টির চাহিদা পুরণ, তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে ২০ হাজার নারিকেল গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
জেলার ৫ উপজেলায় পরিবেশ বান্ধব নারিকেল গাছ বৃদ্ধির লক্ষ্যেই সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ৪ হাজার কৃষকের মধ্যে ৫টি করে মোট ২০ হাজার উচ্চ ফলনশীল নারিকেল গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ৯০০ জন কৃষকের মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ নারিকেলের চারা, মুকসুদপুর উপজেলার ৮৫০ জন কৃষকের মধ্যে ৪ হাজার ২৫০টি নারিকেলের চারা, কাশিয়ানী উপজেলার ৮৫০ জন কৃষকের মধ্যে ৪ হাজার ২৫০টি নারিকেলের চারা, কোটালীপাড়া উপজেলার ৭০০ জন কৃষকের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০টি নারিকেলের চারা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৭০০ জন কৃষকের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০টি নারিকেলের চারা বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
নারিকেল পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ। নারিকেল গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ও বজ্রপাত নিরোধক। ডাব ও নারিকেল থেকে মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি পাওয়া যায়। নারিকেলের তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানী নির্ভরতা কমানো সম্ভব। তাই এই বছর জাতীয় বৃক্ষ রোপণ অভিযানের অংশ হিসেবে সরকার গোপালগঞ্জে ২০ হাজার নারিকেলের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরা জুন মাসের মাঝামাঝি ২০ হাজার নারিকেলের চারা পাই। তারপর বিতরণ শুরু করি। এরমধ্যে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মাফরোজা আক্তার বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জের ঝুঁকি মোকবেলায় নারিকেল গাছের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ইতিমধ্যে বজ্রপতে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গাছ বজ্রপাতরোধী। তাই নারিকেল গাছ বজ্রপাত রোধ করে মানুষ ও প্রাণির জীবন রক্ষা করবে। এই চারা বিতরণের সময় রোপণ পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করেছি। কৃষকরা এই চারা নিয়ে রোপণ করেছন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক মঞ্জুর হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি ৫টি নারিকেলের চারা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেয়েছি। চারা দেয়ার সময় কৃষি অফিসার মাফরোজা আক্তার নারিকেলের চারা রোপন ও পরিচর্যা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। সেইভাবেই চারা রোপণ করেছি। তাদের পরামর্শ অনুসরণ করেই নারিকেল গাছ পরিচর্যা করব। নারিকেল গাছ এত উপকারী বৃক্ষ তা আগে জানতাম না। বাজারে ডাব ও নারিকেলের ভাল দাম রয়েছে। তাই এখান থেকে আয়ের একটা ব্যবস্থা হবে। বৃক্ষ বিতরণের সময় কৃষি অফিসার মাফরোজা আক্তার এই বিষয়ে আমাদের অবহিত করেছেন।
গোপালগঞ্জের পরিবেশ রক্ষা কর্মী বিধান চন্দ্র বলেন, বিগত ৩০ বছর আগে গোপালগঞ্জ জেলায় ৩ লাখ নারিকেল গাছ ছিল। এখন আছে মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার। ৩০ বছরে এই জেলায় নতুন বাড়িঘর নির্মাণ ও নির্বিাচারে বৃক্ষ নিধন করায় অন্তত ৫০ ভাগ নারিকেল গাছ বিলুপ্ত হয়েছে। এই কারণে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারিকেল গাছ ঝড় ও ঝঞ্ঝার বাতাস প্রতিরোধ করে। পরিবেশ বান্ধব এই গাছ থেকে পুষ্টি পাওয়া যায়। এছাড়া নারিকেল থেকে তেল উৎপাদিত হয়। সরকার গোপালগঞ্জে ২০ হাজার নারিকেলের চারা বিতরণ করেছে। এই চারা রোপণ করা হয়েছে । সরকারের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। গোপালগঞ্জে নারিকেল গাছ আরো বৃদ্ধি করতে হবে। এইভাবে নারিকেলের চাষাবাদ বৃদ্ধি করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি নারিকেল তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। তাহলেই সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
Leave a Reply